অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য সংগৃহীত অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা রাখার নির্দেশ
বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসর এবং কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই চাঁদা কোথায় জমা রাখা হবে সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা থেকে জানা যায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলিত অবসর এবং কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থ সুনির্দিষ্ট ব্যাংক হিসেবে জমা রাখা হবে। আসুন দেখে নেই মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নোটিশঃ
dshe.gov.bd ওয়েবসাইটে ০৫/১২/২০২৩ খ্রি. তারিখে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারিকৃত নোটিশে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত (১ ) ও (৩ ) নং স্মারকে বেসরকারি স্কুল,স্কুল এন্ড কলেজে (মাধ্যমিক ,নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর ) শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা’র উপানুচ্ছেদ ১০.৬ এ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক / কর্মচারীগণের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য ভর্তিকালীন সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ /- টাকা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতে জমা দিতে হবে ।
৭০ /- টাকা অবসর এবং ৩০ /- টাকা কল্যাণ তহবিলের সংশ্লিষ্ট হিসাব খাতে জমা প্রদান করতে হবে মর্মে উল্লেখ রয়েছে । তৎপ্রেক্ষিতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি কালীন সূত্রোক্ত( ২) স্মারক পত্রে ১০০ /- টাকা গ্রহণ করে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের তহবিলে /ব্যাংক হিসাবে জমা রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল । ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ও শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা অনুসরণপূর্বক ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে ।
এমতাবস্থায়, শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা’র উপানুচ্ছেদ ১০.৬ এ উল্লিখিত নির্দেশনা মোতাবেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক / কর্মচারীগণের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলের জন্য নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী প্রতি ১০০ /- ( একশত ) টাকা হারে সংগৃহীত অর্থ প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ একটি নতুন ব্যাংক হিসাব খুলে তাতে জমা রাখবেন এবং জমাকৃত অর্থের রশিদসহ রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করবেন ।
বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশক্রমে অবহিত করা হলো।
এর আগে জানা যায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসর উত্তর কল্যাণ তহবিলের অর্থ এবং অবসর ভাতা প্রদানের জন্য যে ফান্ড রয়েছে সেই ফান্ডে অর্থ সংঘট রয়েছে। অর্থ সংকটের কারণে শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর যথাসময়ে তাদের প্রাপ্য টাকা ফিরে পাচ্ছেন না। এরি প্রেক্ষিতে নতুনভাবে ফান্ড গঠনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের নীতিমালা তৈরি করেছে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে উত্তোলন করা শুরু হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলিত অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে জমা রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ভর্তি সহায়তা আবেদন 2023
নতুন স্কেলে কল্যাণ সুবিধা প্রদান
বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ২০০৯ সালে পদ ও নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী কল্যাণ সুবিধা প্রদান করছে। নতুন পে-স্কেলে সরকার থেকে শুধু বেতনের টাকা প্রদান করা হয়েছে। কল্যাণ সুবিধা বা অবসরের জন্য কোন টাকা দেওয়া হয়নি। কল্যাণ ট্রাস্টের নিজস্ব তহবিল থেকে কল্যাণ সুবিধার টাকা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের নতুন স্কেলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধার দাবি মেটাতে কল্যাণ ট্রাস্টের নিজস্ব ফান্ড থেকে অতিরিক্ত প্রায় ৬০ (ষাট) কোটি টাকা প্রদান করতে হচ্ছে।
অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট
অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট হল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা প্রদানের জন্য গঠিত। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মচারীরা অবসরকালীন পেনশন, চিকিৎসা সুবিধা, কল্যাণ সুবিধা ইত্যাদি পেয়ে থাকেন। এই ট্রাস্টটি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ট্রাস্টটির অধীনে বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ শিক্ষক ও কর্মচারী নিবন্ধিত রয়েছেন।
ট্রাস্টটি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা প্রদানের জন্য তাদের বেতনের ৬% হারে চাঁদা আদায় করে থাকে। এই চাঁদার পাশাপাশি, ট্রাস্টটি সরকার ও বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকেও অর্থায়ন গ্রহণ করে থাকে।
কল্যাণ ট্রাস্ট এর সেবা সমূহ
- মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সুবিধা প্রদান
- অসুস্থ জনিত কল্যাণ সুবিধা প্রদান
- হজ্জ পালনে কল্যাণ সুবিধা প্রদান
- তীর্থ পালনে কল্যাণ সুবিধা প্রদান
অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা :
- অবসরকালীন সুবিধা প্রদান: শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরকালীন সুবিধা প্রদানের ফলে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
- স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা সুবিধা: শিক্ষক ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা সুবিধা প্রদানের ফলে তাদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
- শিক্ষক ও কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত: অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে।
অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের চ্যালেঞ্জ :
- অর্থায়নের সমস্যা: ট্রাস্টের তহবিল শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন থেকে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে গঠিত হয়। তবে, চাঁদা প্রদানের হার পর্যাপ্ত না হওয়ায় ট্রাস্টের আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে।
- প্রশাসনিক ব্যয়: ট্রাস্টের প্রশাসনিক ব্যয় অনেক বেশি। এই ব্যয় কমানো হলে ট্রাস্টের তহবিল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য আরও বেশি সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে।
অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা প্রদানের ফলে তাদের জীবনের মান উন্নত হয়েছে।