অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন ও সংশোধন করার নিয়ম ২০২৩
জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক পোস্টে এসেছেন। আজকের এই পোস্টটিতে আমরা আলোচনা করব জন্ম নিবন্ধন আবেদন, নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন, জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড, জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট সম্পর্কে। সেহেতু জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
মানুষের জন্মের পর প্রথম একটি পরিচয় পত্র যারা রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রদান করা হয় সেটি জন্ম নিবন্ধন। জন্ম নিবন্ধন জন্ম নেওয়া একটি শিশুর জাতীয়তা প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেহেতু জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে আমাদের পূর্ণ ধারণা থাকা আবশ্যক। আমরা নিম্নে জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করেছি।
জন্ম নিবন্ধন আবেদন
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। প্রথমত জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার মূল ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনাকে তথ্য পরিবেদন করতে হবে। আমরা আপনাকে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার ধাপসমূহ এখানে উপস্থাপন করছি।
প্রথমত জন্ম নিবন্ধনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://bdris.gov.bd/br/application আপনি ভিজিট করুন। এখানে আপনি জন্ম নিবন্ধন করার জন্য তিনটি ধাপ দেখতে পাবেন।
- জন্মস্থান
- স্থায়ী ঠিকানা
- বাংলাদেশ দূতাবাসে অধীনে জন্ম হলে সেটি টিক মার্ক করে নিবেন।
জন্ম নিবন্ধন করার তিনটি ধাপ নিচে উপস্থাপন করা হলো।
জন্মস্থান,স্থায়ী ঠিকানা ও বাংলাদেশ দূতাবাস এর ভিত্তিতে জন্ম নিবন্ধন
জন্মস্থানে ভিত্তিতে জন্ম নিবন্ধন করতে হলে আপনাকে যে সকল তথ্যবলী প্রদান করতে হবে-
- নামের প্রথম অংশ বাংলায় (যার নামে জন্ম নিবন্ধন হবে তার নামের প্রথম অংশ)
- নামের শেষ অংশ বাংলায় (যার নামে জন্ম নিবন্ধন হবে তার নামের শেষ অংশ)
- নামের প্রথম অংশ ইংরেজিতে (যার নামে জন্ম নিবন্ধন হবে তার নামের প্রথম অংশ)
- নামের শেষ অংশ ইংরেজিতে (যার নামে জন্ম নিবন্ধন হবে তার নামের শেষ অংশ)
- জন্ম তারিখ (খ্রিঃ) ( তিনি কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছে)
জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে শিশু যে হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছে সে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের দেওয়া ছাড়পত্র।
- পিতা ও মাতার কততম সন্তান
- লিঙ্গ
- জন্মস্থানের ঠিকানা ( আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা আবেদনপত্র দেওয়ার নির্দেশনা অনুসারে পূরণ করুন)।
এ সকল তথ্য প্রদান করার পরে আপনি সকল তথ্য পুনরায় যাচাই করে নিবেন যে ঠিক আছে কিনা। এরপর আপনি পরবর্তী পাতায় যাবেন।
- এই পরবর্তী পাতায় শিশুর পিতার সম্পর্কে ও মাতার সম্পর্কে বিস্তারিত প্রদান করতে হবে।
- বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা তথ্য প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর তথ্য প্রদান করুন।
- ডকুমেন্টস আপলোড করুন ( যেমন: টিকা কার্ডের স্কান কপি কিংবা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের দেয়া ছাড়পত্র)
- এরপর একটি প্রিন্ট লেটআউট আসবে আপনি চাইলে এটি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন।
- জন্ম নিবন্ধনের সরকার নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিলে আপনার জন্ম নিবন্ধনের আবেদন সম্পন্ন হবে।
- ৭ দিন থেকে ১৫ দিন পর আপনি আপনার ইউনিয়ন বা পৌরসভায় গিয়ে আপনার আবেদন করা জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিয়ে আসতে পারেন।
তবে, শিশু যদি অন্য দেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার পিতা-মাতা বাংলাদেশের নাগরিক হন তাহলে তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে পারবেন। সেহেতু কোন দেশে ও বাংলাদেশী কোন দূতাবাসের অধীনে জন্মগ্রহণ করেছেন সেটি উল্লেখ করে পরবর্তী ধাপে গিয়ে উপরের তথ্যবলী অনুযায়ী আপনি তথ্য পূরণ করুন।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন
নতুন জন্ম নিবন্ধন করা একটি শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত শিশুর জন্মের ১ দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন তৈরি করলে সেটি ভালো হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে শিশুর টিকা কার্ড, হাসপাতালে চিকিৎসকের দেওয়া ছাড়পত্র, শিশুর পিতা মাতার কর পরিষদের রশিদ, অভিভাবকের সচল একটি মোবাইল নাম্বার, শিশুর অভিভাবকের তথা পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি। এক্ষেত্রে আপনি নিচের উপস্থাপন করা ধাপগুলি অনুসরণ করতে পারেন।
- নামের প্রথম অংশ বাংলায় (যার নামে জন্ম নিবন্ধন হবে তার নামের প্রথম অংশ)
- নামের শেষ অংশ বাংলায় (যার নামে জন্ম নিবন্ধন হবে তার নামের শেষ অংশ)
- নামের প্রথম অংশ ইংরেজিতে (যার নামে জন্ম নিবন্ধন হবে তার নামের প্রথম অংশ)
- নামের শেষ অংশ ইংরেজিতে (যার নামে জন্ম নিবন্ধন হবে তার নামের শেষ অংশ)
- জন্ম তারিখ (খ্রিঃ) ( তিনি কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছে)
- পিতা ও মাতার কততম সন্তান
- লিঙ্গ
- জন্মস্থানের ঠিকানা ( আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা আবেদনপত্র দেওয়ার নির্দেশনা অনুসারে পূরণ করুন)।
- এই পরবর্তী পাতায় শিশুর পিতার সম্পর্কে ও মাতার সম্পর্কে বিস্তারিত প্রদান করতে হবে।
- বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা তথ্য প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর তথ্য প্রদান করুন।
- ডকুমেন্টস আপলোড করুন ( যেমন: টিকা কার্ডের স্কান কপি কিংবা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের দেয়া ছাড়পত্র)
- এরপর একটি প্রিন্ট লেটআউট আসবে আপনি চাইলে এটি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন।
- জন্ম নিবন্ধনের সরকার নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিলে আপনার জন্ম নিবন্ধনের আবেদন সম্পন্ন হবে।
- ৭ দিন থেকে ১৫ দিন পর আপনি আপনার ইউনিয়ন বা পৌরসভায় গিয়ে আপনার আবেদন করা জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিয়ে আসতে পারেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য আপনাকে https://bdris.gov.bd/br/correction ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি যার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন তার জন্ম নিবন্ধন কার্ডের ১৭ ডিজিট নম্বর ও জন্ম তারিখ(বছর-মাস-দিন) দিয়ে অনুসন্ধান করুন। আপনার অনুসন্ধানের ফলাফল চলে আসলে আপনি সংশোধন করে নিবেন।
আমাদের দেশের ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে থাকে। আপনি সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করতে পারেন। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর সার্ভিস চার্জ যা সরকার নির্ধারিত অর্থ প্রদান করতে হয়।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই এর জন্য আপনাকে https://everify.bdris.gov.bd/ ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। আপনি এখানের ফর্মের ১ম বক্সে জন্ম নিবন্ধন এর ১৭ ডিজিটের সংখ্যা,২য় বক্সে জন্ম তারিখ (বছর-মাস-দিন) ও ৩য় বক্সে আপনি নিচে দেওয়া ক্যাপচার সংখ্যা আপনাকে সঠিকভাবে দিতে হবে। এরপর আপনি এ অনুসন্ধান করুন বা সার্চ অপশনে ক্লিক করার মাত্রই আপনার যদি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ডাটা এন্ট্রি থাকে তাহলে ফলাফল চলে আসবে। আর যদি কোন ফলাফল না আসে,সেহেতু আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনলাইন করে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার ইউনিয়ন পরিষদের যোগাযোগ করুন।
জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড
যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা থাকে, তাহলে আপনি অনলাইন থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করতে পারবেন। যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা থাকে তাহলে https://everify.bdris.gov.bd/ ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। আপনি এখানের ফর্মের ১ম বক্সে জন্ম নিবন্ধন এর ১৭ ডিজিটের সংখ্যা,২য় বক্সে জন্ম তারিখ (বছর-মাস-দিন) ও ৩য় বক্সে আপনি নিচে দেওয়া ক্যাপচার সংখ্যা আপনাকে সঠিকভাবে দিতে হবে। এরপর আপনি এ অনুসন্ধান করুন বা সার্চ অপশনে ক্লিক করার পর আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদর্শিত হবে। আপনি যদি ডেস্কটপ থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করতে চান সেহেতু আপনি ctrl+p চেপে জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করুন। অনুরূপভাবে, আপনি যদি মোবাইল দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করতে চান সেহেতু Chrome দিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন সার্চ করে শেয়ার অপশন থেকে ব্রাউজার স্কিনসর্ট নিয়ে picture to pdf করে নিন বিভিন্ন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে।
জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট
জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট করার জন্য আপনাকেhttps://bdris.gov.bd/application/print ওয়েবসাইট ঠিকানায় গিয়ে অ্যাপ্লিকেশন আইডি নাম্বার ও আপনার জন্ম তারিখ বা পাসওয়ার্ড দিয়ে আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
FAQ
১। বড়দের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে?
বড়দের জন্ম নিবন্ধন করতে প্রয়োজন হয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন ফটোকপি এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।
২। কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায়?
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিংবা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় নির্ধারিত চার্জ পরিশোধ করে।
৩। বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে?
শিশুর বর যদি একদিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে হয় তাহলে প্রয়োজন হবে শিশুর টিকা কার্ড, হাসপাতালে চিকিৎসকের দেওয়া ছাড়পত্র, শিশুর পিতা মাতার কর পরিষদের রশিদ, অভিভাবকের সচল একটি মোবাইল নাম্বার, শিশুর অভিভাবকের তথা পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি।
৪। জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজ লাগে?
জন্ম নিবন্ধন করতে মূলত টিকা কার্ড, হাসপাতালে চিকিৎসকের দেওয়া ছাড়পত্র, অভিভাবকের সচল মোবাইল নম্বর, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিষদের রশিদ, শিশুর পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি প্রয়োজন হয়।
৫। জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে কি কি লাগে?
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করছে আপনাকে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী সাথে করে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হবে। সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিলে ৩ দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন হয়ে যাবে।
৬। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি লাগে?
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে মূলত আপনার জন্ম নিবন্ধনে কোথায় ভুল আছে ও সেই স্থানে কি হবে এটি আপনাকে অনলাইনে কিংবা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জমা দিতে হবে।
শেষ কথা
আশা করি আমরা আপনাকে, জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পেরেছি। পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। এই প্রশ্ন সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন থাকে আপনার তাহলে আপনি কমেন্ট করে জানাতে পারেন।