Trick BD

সার্বজনীন পেনশন ২০২৩ঃ ইউপেনশন অ্যাপে রেজিষ্ট্রেশন ও নীতিমালা

সার্বজনীন পেনশন সুবিধা নিয়ে আজকের আমাদের আলোচনা।  বাংলাদেশ সরকার নতুন একটি পেনশন ভাতা শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যা শুধুমাত্র সরকারি চাকরিতে সীমাবদ্ধ নয় (তবে এ পেনশন ব্যবস্থায় সরকারি চাকরিজীবি অন্ন্তভুক্ত নন) বরং এই পেনশন ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সকল নাগরিক অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক নাগরিক রয়েছে যাদের কোন সঞ্চয়ী একাউন্ট নেই। সে সকল নাগরিকদের সঞ্চয় পেনশন ব্যবস্থা চালু করা পেলু কযে সকল ব্যক্তির ১৮ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর তারা এই সার্বজনীন পেনশন ভাতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ৬০ বছর বয়স হবার পর সার্বজনীন পেনশন সুবিধা পাবেন নাগরিক। 

সার্বজনীন পেনশন 

সার্বজনীন পেনশন  একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ব্যবস্থা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে সরকারি চাকরি করেন ১৪ লাখের বেশি যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছর তারা তাদের চাকরির বয়স শেষ হবার পরে পেনশন পেয়ে থাকেন। আমাদের দেশে আট কোটির বেশির মানুষ রয়েছেন যাদের বয়স ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরেরে মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যারা যার ১৪ লক্ষ মানুষ বাদে সবাই ব্যবসা,বেসরকারি চাকরি ও ইত্যাদি কাজ করে থাকেন। আমাদের দেশে ৬০ বছর বয়সের সরকারিজীবি মানুষেরা তাদের চাকরির বয়স শেষে পেনশন পেয়ে থাকেন কিন্তু বেসরকারি ও ব্যবসা ও অন্য পেশার ব্যকৃতির জন্য পেনশন ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশে ৬০ বছরের বৃদ্ধ মানুষেরা ভাতা পেয়ে থাকেন কিন্তু অনেকে রয়েছেন যারা বৃদ্ধ তারা এ ভাতার অন্তর্ভুক্ত নয়। সার্বজনীন পেনশন সুবিধা চালু হলে দেশের ৮ কোটি বেশি ব্যক্তি  এ সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন ও তাদের ভবিষ্যৎ বৃদ্ধ বয়সে চিন্তা কম করতে হবে। 

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা

এই পেনশন ব্যবস্থা মূলত চারটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এই চারটি ধাপে আমাদের দেশের চার শ্রেণীর মানুষ এই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যোগদান করতে পারবেন। তথা: 

  • বেসরকারি খাতের চাকরিজীবি
  • প্রবাসী বাংলাদেশি 
  • অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী 
  • অস্বচ্ছল ব্যক্তি 

নিচে এই পেনশন ব্যবস্থার বিস্তারিত উপস্থাপন করা হলো: 

(১) বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী : যারা বেসরকারি খাতে চাকরি করেন  তারা মাসে এক হাজার টাকা থেকে ৫০০০ টাকা সঞ্চয় করে এই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং বৃদ্ধ বয়সে চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবেন পেনশন সুবিধা পেয়ে।  

(২) প্রবাসী বাংলাদেশি: এই পেনশন ব্যবস্থায় যে সকল প্রবাসীরা টাকা সঞ্চয় করে রাখতে চান  ও ভবিষ্যৎ  সুবিধা নিশ্চিত করতে চান। তারা মাসে ৫০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন পেনশন তহবিলে। 

(৩) অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী:  

 অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী বলতে বুঝায় রিক্সাওয়ালা,হকার, গৃহস্থালির কাজ করে এমন মিস্ত্রি  ইত্যাদি। তারা মাসে মাত্র ৫০০ টাকা সঞ্চয় করে এ খাতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে সে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত এই সার্বজনীন পেনশন তহবিলে সঞ্চয় করতে পারবেন।  

(৪) অস্বচ্ছল ব্যক্তি: আমাদের দেশে অনেক অসচ্ছল পরিবার রয়েছে যা সঞ্চয় করতে জানেন না। আবার খুব কমই মানুষ আছে যারা দরিদ্র সীমার নিচে রয়েছেন। এ সকল ব্যক্তি যারা অসচ্ছল, তারা চাইলেই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার তহবিলে মাসে মাত্র ৫০০ টাকা সঞ্চয় করে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।  

সর্বজনীন পেনশন রেজিষ্ট্রেশন

শর্ত সমূহ, 

এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে
ক) আমি সরকারি/ আধা-সরকারি/ স্বায়ত্তশাসিত/ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই
খ) সর্বজনীন পেনশন স্কিম বহির্ভূত কোন ধরনের সরকারি/ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হতে পেনশন সুবিধা গ্রহণ করি না
গ) আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোন ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না

উল্লেখ্য, ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন বাতিল হবে এবং জমাকৃত অর্থ ফেরত যোগ্য হবে না।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • জাতীয় পরিচয়পত্র
  • জন্মসনদ
  • মোবাইল ফোন নম্বর
  • ইমেইল আইডি
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর
  • ব্যাংকের শাখার নাম
  • রাউটিং নম্বর
  • নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র
  • নমিনির মোবাইল ফোন নম্বর

রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া

নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করে আপনি সর্বজনীন পেনশনের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবেন:

  1. সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট www.upension.gov.bd এ যান।
  2. পেনশনার রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করুন।
  3. স্কিম নির্বাচন করুন। আপনি প্রগতি স্কিমসুরক্ষা স্কিমসমতা স্কিম বা প্রবাস স্কিম নির্বাচন করতে পারেন।
  4. আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করুন।
  5. আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য পূরণ করুন।
  6. আপনার নমিনির তথ্য পূরণ করুন।
  7. ক্যাপচা প্রদান করুন
  8. সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।

রেজিষ্ট্রেশনের পরবর্তী ধাপ

রেজিষ্ট্রেশনের পর আপনার মোবাইল ফোন এবং ইমেইল আইডিতে একটি ওটিপি পাঠানো হবে। ওটিপি প্রদান করার পর আপনার রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হবে।

আপনার রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হলে আপনি ইউপেনশন অ্যাপের মাধ্যমে আপনার পেনশন অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম

পেনশন স্কিম হল একটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে পরিচালিত একটি পেনশন স্কিম। এই স্কিমের আওতায় ১৮ বছর বয়স থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

সার্বজনীন পেনশন পেনশনার আবেদন ফরম

এই স্কিমের চারটি প্যাকেজ রয়েছে:

  • প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য)
  • সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য)
  • সমতা স্কিম (স্বল্প আয়ের স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য)
  • প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য)

প্রতিটি প্যাকেজের জন্য মাসিক চাঁদার হার ভিন্ন। চাঁদা পরিশোধের নিয়মও ভিন্ন।

পেনশন স্কিমের চারটি স্কিমে চাঁদা এবং পেনশনের পরিমাণ

[table id=9 /]

পেনশনার আবেদন ফরম

পেনশনার আবেদন ফরম- সার্বজনীন পেনশন

সার্বজনীন পেনশনের সুবিধা 

জীবন চক্রে চক্রে মানুষ বৃদ্ধ হয়। আর আমাদের কেউ বৃদ্ধ হতে হবে। বর্তমান সময়ে বৃদ্ধ বয়সে আমরা কি করব এবং কিভাবে বেঁচে থাকবো এই নিয়ে আমরা চিন্তা করি। এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ সরকার সার্বজনীন পেনশন নামে একটি স্কিম শুরু করতে যাচ্ছে। সার্বজনীন পেনশন থেকে যে সকল সুবিধা আমরা পেয়ে থাকবো সে সকল সুবিধা নিচে উপস্থাপন করা হলো:

যদি কোন ব্যক্তি ৫০ বছর বয়সে সার্বজনীন পেনশনের অন্তর্ভুক্ত হন তিনি ৫০০ টাকা করে ১০ বছর দেবার পর তিনি পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। এক্ষেত্রে তিনি যদি ৬০ বছর বয়সে সারাদিন পেনশন ভাতা অন্তর্ভুক্ত হন ৫০০ টাকা করে তাহলে তিনি ৭০ বছর বয়সে পেনশন পাবেন। 

  • যে সকল ব্যক্তি অস্বচ্ছল রয়েছেন। তাদের চাঁদায় পঞ্চাশ শতাংশ সহায়তা করবে সরকার। 
  • পেনশন দাতা বা পেনশন গ্রহীতা চাইলে যেকোনো সময় স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন।
  • সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আপনাকে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে এবং আপনার বয়স হতে হবে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের মধ্য। 
  • যদি কোন ব্যক্তি ধারাবাহিকভাবে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ১০ বছরের যাবৎ টাকা সঞ্চয় করে আসেন। তাহলে তিনি পেনশন পাবার উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। 
  • পেনশনের জন্য নির্ধারিত ৬০ বছর পূর্ণ হলেই সার্বজনীন পেনশন তহবিলে জমাকৃত নির্ধারিত টাকা ও লাভাংশ তিনি প্রতিমাসে মাসে পেনশন  পাবেন নির্ধারিত হারে।
  • নির্ধারিত দশ বছর টাকা জমা দেওয়ার আগেই যদি নিবন্ধিত চাঁদা প্রদান করে যদি ব্যক্তি মারা যায়, তাহলে তার নমিনি মুনাফা সহ মূল অর্থ ফেরত পাবেন নিদিষ্ট শর্তাবলী অনুযায়ী।  
  • বাংলাদেশে অনেক নাগরিক যারা বিদেশে কর্মরত রয়েছে আমরা যাদের প্রবাসী বলে থাকি। তারা সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন । 
  • জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫০ তারা সবাই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। 
  • সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রতিটি নাগরিককে আলাদা করে একটি হিসাব তালিকা থাকবে। যেখানে তার পেশা পরিবর্তন হলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। 
  • সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সর্বনিম্ন চাঁদার হার  নির্ধারিত থাকবে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা এৈমাসিক ভিত্তিতে সার্বজনীন পেনশন তহবিলে  চাঁদা প্রদান করতে পারবেন।
  • সার্বজনীন পেনশন তহবিলে চাঁদা প্রদানকারী পেনশনধারী ব্যক্তিরা তাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন পাবেন অর্থাৎ আজীবন পেনশন পাবেন। 
  • এছাড়াও সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আরো কিছু অনেক সুবিধা রয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ সাধারণত অসুস্থ হয়ে পড়ে, অনেক পরিবার আছে এই অসুস্থ মানুষের ওপর নির্ভর করে তাদের পরিবার চলে। সেহেতু সার্বজনীন পেনশন সুবিধা ব্যবস্থা একটি উত্তম পরিকল্পনা হতে পারে মধ্যবিত্ত ও অস্বচ্ছল পরিবারের জন্য। 

শেষকথা

আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে, সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর আপনি সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় নিবন্ধন করবেন আপনার ভবিষ্যৎ চিন্তা করেন। তাহলে আমরা বলতে পারি যে আপনি সঠিক পরামর্শ নিয়েছেন সার্বজনীন পেনশন সুবিধা লাভের জন্য । আপনি যখন সার্বজনীন পেনশন তহবিলে চাঁদা প্রদান করার জন্য নিবন্ধন করবেন আপনার কাছে আমাদের পরামর্শ যে, আপনি সকল শর্তাবলীসমূহ ভালো করে পড়ে নিবেন। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসার জন্য আজই নিবন্ধন করুন। সার্বজনীন পেনশন সুবিধা পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ! পোস্টটি ভালো লাগলে আপনি আপনার নিকটতম বন্ধুদের কাছে বা আত্মীয়ের কাছে পোস্টটি শেয়ার করুন।

FAQ

প্রশ্ন: পেনশন স্কিমে মুনাফাসহ বছর শেষে কত টাকা জমা হলো চাঁদাদাতা কিভাবে জানতে পারবে?

উত্তর: চাঁদাদাতা তার পেনশন আইডি দিয়ে Universal Pension সিস্টেমে প্রবেশ করে সহজেই বছর শেষে মুনাফাসহ জমাকৃত টাকার পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারবেন।

প্রশ্ন: চাকরি পরিবর্তন করলে নতুন পেনশন নম্বর গ্রহন করতে হবে কিনা?

উত্তর: চাকরি পরিবর্তন করলে নতুন পেনশন নম্বর গ্রহণ করতে হবে না। শুধু জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

প্রশ্ন: চাঁদাদাতার বয়স ৬০ হওয়ার পর তিনি কিভাবে পেনশন পাবেন?

উত্তর: চাঁদা দাতার বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর তার ব্যাংক হিসাবে অথবা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে মাসিক পেনশন প্রদান করা হবে।

প্রশ্ন: কেবল অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করলেই পেনশন স্কিমে অংশগ্র্হন করা যাবে নাকি হার্ডকপি জমা দিতে হবে?

উত্তর: হার্ড কপি জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। শুধু অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে মাসিক টাকা জমা দিলেই হবে।

Nirob

আমি নিরব। এটি আমার বাংলা শিক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট। যেখানে আমি প্রতিনিয়ত শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন বিষয়ে লেখা প্রকাশ করি।