ক্রেডিট কার্ড কি? ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার সঠিক নিয়ম ২০২৩
ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে নিশ্চয়ই অনেক কিছু শুনেছেন। অনেকেই তো বলে মেশিন থেকে টাকা বের করার কার্ড। ডিজিটাল ব্যাংকিং এ ব্যবহৃত দুই ধরণের কার্ড রয়েছে। ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড। আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে A-Z জানতে পারবেন। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক।
ক্রেডিট কার্ড কি?
ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে মূলত আপনার ব্যাংক কর্তৃক দেয়া একটি প্লাস্টিক কার্ড। উক্ত কার্ডটি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর সাথে লিংক করা থাকে। এর ফলে, আপনি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে বা যেকোনো সুপার শপে সব ধরনের পেমেন্ট করতে পারবেন। এছাড়াও, বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। তবে, ক্রেডিট কার্ড মূলত শপিং এবং বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্ট করার জন্য বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ড এর পার্থক্য কী?
অনেকেই ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ড এর মাঝে পার্থক্য খুঁজে পান না এবং দুইটি কার্ডের মাঝে বিভিন্ন বিষয় গুলিয়ে ফেলেন। ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ড কিন্তু এক নয়। দুইটি কার্ড সম্পূর্ণ ভিন্ন। ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যাংকে জমা থাকা ব্যালেন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের পেমেন্ট করা যায়, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যায় এবং ব্যালেন্স ট্রান্সফার করা যায়।
কিন্তু, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যাংকে জমা থাকা ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয় না। আপনি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে যে সকল লেনদেন করবেন, সবকিছু ব্যালেন থেকে লোন নিয়ে করা হবে। অর্থাৎ, আপনি যখন একটি ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিবেন এবং উক্ত ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কোথাও পেমেন্ট করবেন, উক্ত পেমেন্ট এর সমপরিমাণ অর্থ আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ বিকাশ টু ব্যাংক ও ব্যাংক টু বিকাশ টাকা ট্রান্সফার করার নিয়ম 2023
অর্থাৎ, আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনার ব্যাংকে থাকা টাকা ব্যবহার করছেন না। ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করছেন যা আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পরিশোধ করতে হবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করতে না পারেন, তবে উক্ত টাকার উপর ব্যাংক কর্তৃক সুদ ধার্য করা হবে। যা আপনাকে পরবর্তীতে পরিশোধ করতে হবে। এরপরও পরিশোধ করতে সময়ক্ষেপণ করলে ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে।
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
আপনি চাইলেই একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ডেবিট কার্ড নিতে পারবেন, কিন্তু চাইলেই একটি ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন না। ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মানতে হবে। যেমন, আপনাকে অবশ্যই আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে। আপনি যে আর্থিকভাবে সচ্ছল তার প্রমাণ ব্যাংককে দেখাতে হবে। তবেই, তারা আপনাকে ক্রেডিট কার্ড দিবে।
আপনি যদি একজন চাকুরিজীবী হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই আপনার চাকুরির বয়স ৬ মাসের বেশি হতে হবে। ৬ মাসের কম হলে আপনাকে ক্রেডিট কার্ড দিবে না। এছাড়াও, আপনার বেতন সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা হতে হবে এবং ৬ মাসের ব্যাংক হিসাব দেখাতে হবে। এছাড়াও, জাতীয় পরিচয় পত্র, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার, রেফারেন্স এবং দুই কপি ছবি সহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে।
ব্যবসায়ীরা যদি ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তবে তাকে অবশ্যই ১০ লক্ষ টাকার লেনদেন দেখাতে হবে। এছাড়াও, জাতীয় পরিচয় পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, রেফারেন্স, দুই কপি ছবি সহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। তবেই, ক্রেডিট কার্ড মিলবে।
আপনি দুই ধরণের ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন। সিঙ্গেল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড এবং ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড। দেশের বাইরে গিয়ে কেনাকাটায় পেমেন্ট করা কিংবা বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে চাইলে অবশ্যই ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড নিতে হবে। লেনদেন এর সমপরিমাণ টাকা দেশে এসে ব্যাংকে জমা দিলেই হয়ে যাবে। তবে, শুধু দেশের ভিতরে লেনদেন করতে চাইলে সিঙ্গেল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন।
ক্রেডিট কার্ড খরচ কেমন?
একেক ব্যাংক একেক রকম অফারে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। আপনি যে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, উক্ত ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে বা ওয়েবসাইট ভিজিট করে ক্রেডিট কার্ড এর অফার সংক্রান্ত সকল তথ্য জানতে পারবেন। আপাতত, আপনি ব্রাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক সহ আরও অনেক ব্যাংক থেকেই ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড নেয়ার জন্য প্রতিটি ব্যাংক এর আলাদা আলদা নিয়ম থাকতে পারে যা সম্পর্কে আপনি তাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
ক্রেডিট কার্ডে থাকা নাম্বার, কার্ডের মেয়াদ এবং কার্ডের সিভিভি নাম্বার দিয়ে যেকোনো ধরণের লেনদেন করা যায়। এছাড়াও, বুথ বা সুপার শপে কার্ড সোয়াইপ করে পেমেন্ট করা যায়। কার্ডের নাম্বার, মেয়াদ এবং সিভিভি সহ কোন তথ্য দ্বিতীয় কোন ব্যাক্তির সাথে শেয়ার করা যাবে না। এতে করে তারা চাইলে আপনার কার্ডটি হাতে না নিয়েও সেটি ব্যবহার করতে হবে।
ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যাংকে থাকা ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার মাধ্যমে লেনদেন করা হয়ে থাকে। তাই, অসাধু কোন ব্যক্তি আপনার কার্ডের তথ্য পেয়ে গেলে অসাধু উপায়ে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে লেনদেন করতে পারে। ফলে, আপনাকে উক্ত ব্যাক্তির করা লেনদেন এর অর্থ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে। তাই, ক্রেডিট কার্ড এর তথ্য এবং কার্ডটি সুরক্ষিত রাখতে হবে।